৩৯ বছরের শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে গেলেন যোগেন্দ্র চন্দ্র সরকার
দুলাল মিয়া ::
প্রিয় শিক্ষকের বিদায়। সকাল থেকেই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুলে হাজির হয় প্রিয় শিক্ষককে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদনের জন্য। শিক্ষার্থী ও সহকর্মী সবাই অশ্রুসিক্ত। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। বিদায় বিষাদের হলেও কখনো কখনো চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। সকলের ভালোবাসায় সিক্ত এমনই বিদায় সংবর্ধনা পেয়েছেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ৪০নং লালারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক যোগেন্দ্র চন্দ্র সরকার।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে প্রধান শিক্ষক মো. মাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সহকারী শিক্ষক মো. মহিন উদ্দিনের সঞ্চালনায় বিদ্যালয়ের হলরুমে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্য রাখেন বিদায়ী শিক্ষক যোগেন্দ্র চন্দ্র সরকার। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কাউসার আহমদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষক মো. মহিন উদ্দিন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সহকারী শিক্ষক রেশমা আক্তার, নাহিদা সুলতানা, সালমা খন্দকার, বিলকিস আক্তার, ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজ দাশ ও অনির্বাণ দেব প্রমুখ। শ্রদ্ধাঞ্জলি পাঠ করেন সহকারী শিক্ষক সালমা খন্দকার।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সুলেমান মিয়া ও গীতাপাঠ করেন মনিকা রানী নাথ।
আবেগঘন পরিবেশে বিদায়ী শিক্ষককে ফুলে দিয়ে শুভেচ্ছা জানান শিক্ষার্থী ও সহকর্মীবৃন্দ। শুভেচ্ছা স্বরূপ ক্র্যাস্ট ও বিভিন্ন উপহারসামগ্রী প্রিয় শিক্ষকের হাতে তুলে দেন সহকর্মীবৃন্দ।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজ দাশ ও অনির্বাণ দেব বলেন, যোগেন্দ্র স্যার শুধু শিক্ষকই ছিলেন না, তিনি আমাদেরকে বাবার মতো ¯েœহ করতেন। তিনি আমাদের প্রতি খুব সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন। স্যার খুব মনোযোগ ও দক্ষতার সাথে আমাদেরকে পাঠদান করিয়েছেন। তিনি আমাদের জীবনের একজন আদর্শ শিক্ষক। তাঁর বিদায় আমাদেরকে খুব মর্মাহত করছে। তিনি না থাকলেও তাঁর দেওয়া শিক্ষা আমাদের জীবন গড়তে খুব সহায়ক হবে।
সহকারী শিক্ষক রেশমা আক্তার বলেন, যোগেন্দ্র চন্দ্র সরকার স্যার আমাদের শুধু সহকর্মীই ছিলেন না; একজন যোগ্য অভিভাবকও ছিলেন। তাঁর সততা, মহত্ব ও কর্মকুশলতা আমাদের গর্বের বস্তু। তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক ছিলেন। একসাথে চলার পথে আপনার মনে যদি আমরা কোনো কষ্ট দিয়ে থাকি এজন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আপনার মহানুভবতার গুণে আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। দোয়া করি আপনার অবসর জীবন আরও সুন্দর ও সুখময় হোক। আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
বিদায়ী শিক্ষক যোগেন্দ্র চন্দ্র সরকার বলেন, পরম করুণাময়ের অশেষ কৃপায় আজ আমার বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় সহকারী শিক্ষকের পদ থেকে অবসরে চলে যাচ্ছি। আমি আপনাদের দোয়ায় ৩৯ বছর চাকুরিকাল অতিবাহিত করে আজ থেকে অবসরে চলে যাচ্ছি। আগামীকাল থেকে আমার অবসর জীবন শুরু হবে। এই ঊনচল্লিশ বছর চাকুরি জীবনে যে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি সেই সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মানিত প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করছি। কৃতজ্ঞা প্রকাশ করছি আমার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সম্মানিত সকল প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকবৃন্দের প্রতি। তাঁরা আমাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে যে সকল শিক্ষক নেতৃবৃন্দ আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এবং তাঁদের কাছ থেকে দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করছি। আমি বিশেষভাবে লালারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকর্মীবৃন্দ ও শিক্ষার্থীদেরদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, এমন একটি সুন্দর বিদায় অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য। আমি আপনাদের কিছুই দিতে পারি নি। আপনাদের প্রতি আমার দোয়া ও ভালবাসা রইল। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, আমি বিদায় নিচ্ছি, কিন্তু আমার দোয়া ও ভালোবাসা রেখে গেলাম। তোমরা ভালো করে লেখাপড়া কর। তোমরা সবাই একদিন অনেক বড় হবে। তোমরা নিজেদেরকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। তোমরা আমাকে যেভাবে সম্মানের দিয়ে বিদায় দিয়েছ তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তোমাদের প্রতি আমার ¯েœহ ও ভালোবাসা অনেক বেড়ে গেছে। আমি সুযোগ পেলেই তোমাদের কাছে আসবো, তোমাদের লেখাপড়ার খোঁজ নিবো। তোমাদের মা-বাবাকে আমার আদাব ও সালাম দিবে। আমার জন্য দোয়া করতে বলবে।
বিদায়ের নানা আনুষ্ঠানিকতার শেষে বিকেলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সহকর্মীরা বিদায়ী প্রিয় শিক্ষককে শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে বাড়ি পৌঁছে দেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ